ঢাকায় আসছেন দুই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা: আলোচনায় থাকছে যা
আপলোড সময় :
১১-০৪-২০২৫ ১২:৩৭:২৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
১১-০৪-২০২৫ ১২:৩৭:২৯ অপরাহ্ন
বাংলাদেশে আসন্ন সফরের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আগমন ঘিরে প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানিপণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাবে ঢাকা। এছাড়াও, ইউএসএআইডির সহায়তা হ্রাসের ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো তুলে ধরার পরিকল্পনাও রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন এবং আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়েও জোরালো অবস্থান নেবে বাংলাদেশ।
চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এল. চুলিক আসছেন ১৬ এপ্রিল, আর পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এন্ডু হেরাপ আসবেন ১৭ এপ্রিল। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে এটাই তাদের প্রথম উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশ সফর, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নিকোল চুলিকের সফরটিকে রুটিন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেখা হলেও, এন্ডু হেরাপের আগমন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মিয়ানমারে চলমান যুদ্ধ, আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নানা ইস্যু আলোচনায় আসতে পারে। আলোচনাকে ফলপ্রসূ করতে মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতেরও ঢাকায় উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রায় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াশিংটন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়েছে। তবে বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে জিএসপি সুবিধা বাতিলসহ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের ক্ষতির দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। ট্রাম্প যদিও সাময়িকভাবে কিছু দেশের ওপর শুল্ক কমিয়েছেন, বাংলাদেশ তার সুফল পায়নি। ফলে এখন পোশাক খাতে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে।
এছাড়া, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে চাপ আরও বেড়েছে। এসব বিষয় নিয়েও মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কার, নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আগ্রহ দেখানো হতে পারে।
সম্প্রতি ভারত সফরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং সরাসরি ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
অন্যদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সফরেও উঠে এসেছে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির মানবিক সংকটের বিষয়। জাতিসংঘ চাইছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া হোক। তবে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কৌশলী অবস্থান নিচ্ছে, কারণ এতে মিয়ানমার ও চীনের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। যদি আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতে রাজি হয়, তাহলে বাংলাদেশ মানবিক সহায়তায় সম্মতি বিবেচনা করতে পারে। যদিও আরাকান আর্মি স্বাধীনতা নয়, বরং স্বায়ত্তশাসন চায়, বাংলাদেশ এখনো তাদের সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেনি। ভারত ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে।
এই সফরগুলো বাংলাদেশের কূটনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
নিউজটি আপডেট করেছেন : mainadmin
কমেন্ট বক্স